দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত উপস্থিত হয়ে দর্শকদের মন জয় করে আসছেন আব্দুন নূর সজল। এক সময়ের ‘চকলেট বয়’ খ্যাত এই অভিনেতা আজ নিজেকে গড়েছেন একটি ভার্সেটাইল চরিত্রে, যিনি রোমান্টিকতা থেকে শুরু করে ভৌতিক ও থ্রিলার ঘরানার অভিনয়েও দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারছেন।
এবারের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত সিনেমা ‘জ্বীন ৩’, যা জনপ্রিয় ‘জ্বীন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি। সিনেমাটি মুক্তির আগেই অন্তর্জালে প্রকাশিত গান ‘কন্যা’ দর্শকমনে তৈরি করে ব্যাপক সাড়া। মুক্তির প্রায় তিন সপ্তাহ পরেও গানটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে অবস্থান করছে, যা এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শকদের পক্ষ থেকে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে সর্বসম্মতিক্রমে যে বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে, তা হলো—সজলের অভিনয়ের প্রশংসা। সিনেমাটিতে তাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চরিত্রে দেখা যায়, যেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া।
সিনেমাটি দেখে কনটেন্ট ক্রিয়েটর রবিন রাফান নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “‘জ্বীন ১’, ‘জ্বীন ২’ না দেখলেও ‘জ্বীন ৩’ দেখে আমি হতাশ হইনি। বিশেষ করে রোমান্টিক সিন থেকে ডেভিল ট্রানজিশন বেশ ভালো লেগেছে। সজল ভাইয়া, জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছো।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে হরর মুভির এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাহস আছে বলতে হয়।”
রুম্মান রশীদ খান নামের এক দর্শক বলেন, “সজল ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা। বড় পর্দায় তাকে দেখা যায় খুব কমই। ‘জ্বীন ৩’-এ তার অভিনয় ছিল বিশ্বাসযোগ্য, আমরা তাকে বড় পর্দায় আরও দেখতে চাই।”
ইমতিয়াজ ইমতু জানান, গান ‘কন্যা’ তাকে সিনেমা হলে টেনে নিয়েছিল। এরপর গল্পের ধরনে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। “সবচেয়ে ভালো লেগেছে সজল নূরের অভিনয়, বিশেষ করে ফারিয়াকে কিলিংয়ের দৃশ্যে। রোমান্টিক থেকে ডেভিল রূপে ট্রানজিশনটি দুর্দান্ত ছিল।”
সাদিকুর নাঈম বলেন, “গল্পটি বাংলাদেশের প্রান্তিক প্রেক্ষাপটে রিয়েলিস্টিক মনে হয়েছে। সজলের অভিনয় অনবদ্য ও উপভোগ্য। একের পর এক চোখ ধাঁধানো দৃশ্য ছিল।”
ফারহান সোহেল নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানান, “সজল ভাই, অসাধারণ আপনি। পুরো সিনেমায় বসিয়ে রাখলেন। আপনার পারফরম্যান্স অনেক দিন মনে থাকবে।”
একজন দর্শক চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি গ্রুপে লিখেছেন, “সজল নূরের ডায়লগ ডেলিভারি, লুক সেট, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, এক্সপ্রেশন—সবকিছুই চমৎকার। বিশেষ করে যখন তাকে অদৃশ্য শক্তি আক্রমণ করে, সেই সিনগুলো ভয়ংকরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।”
আফফান মিতুল লেখেন, “সজল ভাইকে অভিনয়ের ইন্সটিটিউট বলা যেতেই পারে। পুরো সিনেমা একাই টেনেছেন তিনি। এরপর বাচ্চা ছেলেটা। বাকিরা শো-পিস।”
আরেকজন দর্শক বলেন, “সবচেয়ে ভালো লেগেছে তানিয়া আহমেদ ও সজল নূরের অভিনয়। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যে তানিয়া আহমেদের পারফরম্যান্স হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আর সজল, আপনি তো একটা ‘জিনিস’! দ্বিতীয়ার্ধে আপনার অভিনয় গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। অসাধারণ।”
‘জ্বীন ৩’ পরিচালনা করেছেন কামরুজ্জামান রোমান, এবং এটি প্রযোজনা করেছে দেশের অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া। পুরো সিনেমা জুড়ে ছিল ভিন্নধর্মী গল্প বলার ধরন এবং একটি সাহসী হরর ঘরানা, যা বাংলা চলচ্চিত্রে বিরল।
‘জ্বীন ৩’ সিনেমার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো যে, আব্দুন নূর সজল কেবল রোমান্টিক চরিত্রেই সীমাবদ্ধ নন, বরং তিনি হতে পারেন একটি পূর্ণমাত্রার চলচ্চিত্রের প্রাণ। দর্শকের ভালোবাসা ও প্রশংসা এটিই জানান দেয়—বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন করে নিজের অবস্থান তৈরি করছেন এই গুণী অভিনেতা।
তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ
