যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে!

যুক্তরাষ্ট্র ইরান.jpg

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যখন ওমানের রাজধানী মাস্কটে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা চলছে, তখনই এক নাটকীয় কৌশলগত মোড় নেয় পরিস্থিতি। আলোচনার আড়ালেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ঘিরে ফেলেছে সামরিক শক্তি দিয়ে—যা এক অনন্য রকমের বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে।

শনিবার মাস্কটে চলমান বৈঠকের সময়ই খবর আসে, মার্কিন বিমানবাহিনী ইতোমধ্যেই ইরানের চারপাশে কৌশলগত ঘেরাটোপ তৈরি করেছে। ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে মোতায়েন করা হয়েছে ছয়টি বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমান, যা সরাসরি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইরানের সামরিক ঘেরাটোপ আরও শক্ত করতে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন। এই রণতরীতে রয়েছে প্রায় ৯০টি ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার এবং প্রায় ৬০০০ নৌসেনা। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, কার্ল ভিনসন মালাক্কা প্রণালী পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করেছে। রণতরীটিতে এফ-৩৫ ফাইটার জেট, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এয়ারক্রাফট এবং বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে।

এর পাশাপাশি, দীর্ঘদিন ধরে লোহিত সাগরে টহলরত অবস্থায় রয়েছে আরেক মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান। যুক্তরাষ্ট্রের এক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের উপকূলে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে, যদিও তিনি বিষয়টি গোপনীয় রাখার অনুরোধ করেন।

এই সামরিক ঘেরাটোপ তৈরি হচ্ছে এমন সময়, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালের আলোচনা চলছে। আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে আবারো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কিন্তু সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেন, “যদি আলোচনায় বসতে না চাও, তাহলে তোমাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালানো হবে।”

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিড ইরানকে আরও কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, “ইরানের সামনে এখন দুটি পথ— হয় ট্রাম্পের শর্ত মেনে নেওয়া, নয়তো ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকা।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিমুখী কৌশল—একদিকে কূটনৈতিক আলোচনা, অন্যদিকে সামরিক মহড়া—আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এটি স্পষ্টতই প্রমাণ করে, ওয়াশিংটন ইরানকে শুধুমাত্র আলোচনার টেবিলে বসাতে নয়, প্রয়োজনে শক্তির মাধ্যমে বশ্যতা স্বীকার করাতে চাইছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সামরিক চাপ ও কূটনৈতিক বার্তার সমন্বয় কেবল মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নয়, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সমীকরণেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply