ইমরান খান নিজের দলে বড় সংস্কার আনতে চলেছেন

ইমরান খান.jpg

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দলটি তাদের রাজনৈতিক ও গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে ব্যাপক সংস্কারের পরিকল্পনা করছে, যার অংশ হিসেবে শাহবাজ গিলের মতো বিতর্কিত শীর্ষ নেতাদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

পিটিআই-এর অভ্যন্তরীণ তথ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, এই পরিবর্তনের জন্য দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা আলোচনায় বসেছেন। গত জানুয়ারিতে গঠিত পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি সম্প্রতি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন পিটিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা, যেমন জুলফি বুকারি, সাজ্জাদ বুরকি, শাহবাজ গিল ও আতিফ খান। তবে, দলের মধ্যে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পিটিআইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার গহর খান ইমরান খানের নির্দেশে এই বিলুপ্তির ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, এই পদক্ষেপটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পিটিআই সমর্থকদের উদ্বেগের ফলস্বরূপ। প্রবাসী নেতারা কমিটির কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এবং ইমরান খানের কাছে গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

পিটিআইয়ের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির কার্যক্রম ও দলটির বিদেশ শাখা ‘পিটিআই চ্যাপ্টারস’-এর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে প্রবাসী নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। তাদের অনেকেই এই কমিটির কার্যক্রম নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেন। একদিকে, পিটিআইয়ের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সদস্যরা সামরিক বাহিনীর প্রতি তাদের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। কিছু সদস্য সামরিক বাহিনী ও এর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন, অন্যদিকে অন্য অংশ সংলাপ ও সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন কিছু মার্কিন প্রবাসী চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী ইসলামাবাদ সফর করেন। সেখানে তারা পাকিস্তানের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে পাশাপাশি, আদিয়ালা জেলে বন্দী ইমরান খানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এই সফরকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে পিটিআইয়ের সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে দলের কট্টরপন্থিরা এটিকে সমালোচনার চোখে দেখছেন।

দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, যতদিন পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিট এবং সদস্যরা সামরিক বাহিনীকে সরাসরি আক্রমণ করে যাবে, ততদিন সংলাপের পরিবেশ তৈরি হবে না। সুতরাং, বিতর্কিত সদস্যদের অপসারণ এবং দলীয় কাঠামো পুনর্গঠনকে বৃহত্তর কৌশলগত পরিবর্তনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়া, দলটি এই পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যত রাজনৈতিক কৌশল পুনর্বিন্যাস করতে চাচ্ছে। ইমরান খানের মুক্তির জন্য যথাসম্ভব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগই বর্তমানে পিটিআইয়ের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পুনর্গঠনের ফলে পিটিআইয়ের ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া আসবে। দলের নেতৃত্ব ও কর্মীপর্যায় এখনো অনিশ্চিত সময় পার করছে, বিশেষ করে ইমরান খানের মুক্তি এবং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে।

তথ্যসূত্র: জিও নিউজ

Leave a Reply