চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সামিট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, এই সামিটে হান্ডা গ্রুপ ও শপ আপ মিলে মোট ৩,১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। তিনি বলেন, যদিও সব ক্ষেত্রে দশে দশ পাওয়া যায়নি, তবে বিডা গত তিন মাস ধরে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক মানের একটি সামিট আয়োজনের জন্য।
এই আয়োজনে কেবলমাত্র সরকার অংশ নেয়নি। মিডিয়া কমিউনিটি, বেসরকারি খাত, বিভিন্ন দূতাবাস, বিদেশি অংশীদার, রাজনৈতিক দল ও সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। আশিক চৌধুরী বলেন, যেটুকু ভালো হয়েছে, তার কৃতিত্ব সবার। আর যেসব ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল, তা আয়োজকদের। ভবিষ্যতে আরও উন্নত আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই ধরনের আয়োজন প্রতি বছর হওয়া উচিত।
সামিটের রাজনৈতিক অনুমোদন ও ধারাবাহিকতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠলেও আশিক চৌধুরী জানান, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আগামী সংসদ সদস্যদের জন্যও একটি সাধারণ লক্ষ্য হবে। বড় রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তারা সামিটে অংশগ্রহণ ও সমর্থন দিয়েছেন, যার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৭১০ জন অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ৪১৫ জন ছিলেন বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি। বাকি অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন দেশীয় ব্যবসায়ী, সরকারি সচিব ও উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি। সামগ্রিকভাবে ব্রেকআউট সেশনসহ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন হাজারের বেশি। এতে ১৩০ জন প্যানেলিস্ট অংশ নেন এবং ১৫০টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সামিটে মোট ৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে কিছু তাৎক্ষণিক, কিছু দীর্ঘমেয়াদি। এই আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং পার্টনার সংস্থাগুলোর অনুদান ছিল আরও ৩.৫ কোটি টাকা।
বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, অনেকেই এখনও বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবসা সহজ সূচক (Ease of Doing Business) রেফার করে, যা বিশ্বব্যাংক নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে। এই ভুল ধারণা পরিবর্তনের দায়িত্ব বিডার এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদেরকে বোঝানো প্রয়োজন কেন বাংলাদেশ ২.০ আলাদা।
আশিক চৌধুরী আরও বলেন, দেশের মানুষকে সামান্য সুযোগ, উৎসাহ আর ইতিবাচকতা দিলে তারা দেশ গড়ার কথা ভাববে, দেশ ছাড়ার নয়। এই সামিটের মাধ্যমে তারা একটি পজিটিভ মোমেন্টাম তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।
সামিটের কার্যক্রম তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। ৭ ও ৮ এপ্রিল বিনিয়োগকারীদের ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখানো হয় এবং স্টার্টআপদের জন্য পৃথক সেশন ছিল। ৯ এপ্রিল সকালে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় এবং সন্ধ্যায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। ৯ ও ১০ এপ্রিল নেটওয়ার্কিং, আলোচনা ও চুক্তি স্বাক্ষরের ধারা অব্যাহত ছিল।
তিনি জানান, সামিট উপলক্ষে একটি থিমেটিক ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। তার প্রেজেন্টেশন নিয়ে আলোচনা হলেও তিনি বলেন, মূল বিষয় ছিল বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। সবাইকে তথ্য যাচাই করে গ্রহণের এবং বিভ্রান্তিতে না পড়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সবশেষে আশিক চৌধুরী বলেন, চার দিনের এই সামিট যদি ভবিষ্যতে ৪ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা সামান্য বদলায়, তাহলেই এটি একটি বড় অর্জন হবে। এই সামিট বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ
