ওজন ৫০ কেজির কম হলে উড়িয়ে নেবে বাতাসে

উড়িয়ে নেবে বাতাসে.jpg

চীনের রাজধানী বেইজিংসহ দেশটির উত্তরাঞ্চল প্রবল ঝড়ের কবলে পড়েছে। বাতাসের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ যে, ৫০ কেজির কম ওজনের মানুষরা বাতাসে উড়ে যেতে পারেন বলে সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এই সতর্কতা শুধু নজিরবিহীনই নয়, বরং দেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য এক গভীর বিপদের বার্তাও বয়ে এনেছে।

গতকাল শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইজিংয়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৩ মাইল (প্রায় ১৫০ কিলোমিটার) ছাড়িয়ে গেছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে রাজধানী শহরটিতে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়।

চীনের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহজুড়ে বেইজিংয়ে বাতাসের গতি ১১ থেকে ১৩ মাত্রার মধ্যে থাকতে পারে। চীনে বাতাসের গতি মাপার জন্য একটি ১৭-ধাপের স্কেল ব্যবহার করা হয়। এই স্কেলে ১১ মাত্রার বাতাসকে ‘মারাত্মক ক্ষতিকর’ এবং ১২ মাত্রার বাতাসকে ‘চরম ধ্বংসাত্মক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানে বেইজিংয়ের বাতাস সেই চরম ঝুঁকির মাত্রাকেই ছুঁয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, যদিও চীনের প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের গড় ওজন সাধারণত ৫৯ থেকে ৬৯ কেজির মধ্যে, অনেকেই শরীরকে স্লিম রাখার জন্য ওজন কমিয়ে ফেলেন। এমন অনেক নাগরিকের ওজন ৫০ কেজির নিচে হওয়ায় তাদের জন্য এই ঝড় মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে। তাই ৫০ কেজির কম ওজনের মানুষদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঝড়ের ভয়াবহতা এতটাই বেশি যে, বেইজিংয়ে ‘অরেঞ্জ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। এটি গত এক দশকে প্রথমবারের মতো এই সতর্কতা কার্যকর করা হলো। চীনে এই সতর্কতা মানেই জনজীবনে সর্বোচ্চ ঝুঁকি এবং সরকারি ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ।

ঝড়ের কারণে দেশটিতে পরিবহন ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র শনিবার (১৩ এপ্রিল) বেইজিংয়ের দুটি প্রধান বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় দুপুর ১১টা পর্যন্ত ৮৩৮টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি রেল যোগাযোগ স্থগিত করা হয়েছে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ দর্শনীয় স্থানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জননিরাপত্তার স্বার্থেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এমন ঝড়ের কবলে পড়ে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। চীনের উত্তরের শহরগুলোতে মানুষ ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে মানুষের ছাতা উড়ে যাচ্ছে, সাইকেল চালাতে গিয়ে কেউ পড়ে যাচ্ছেন কিংবা ব্যালকনির জিনিসপত্র উড়ে রাস্তার মাঝখানে এসে পড়ছে।

চীনা সরকার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি তৎপরতা চালাচ্ছে। নাগরিকদের নিরাপদে থাকতে, অপ্রয়োজনে বাইরে না যেতে এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply