বয়স বাড়বে—এটি যেমন অবধারিত, তেমনি এটিকে ধীর করা যে সম্ভব, তা প্রমাণ করছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা। হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন কিছু খাদ্যাভ্যাসের কথা, যেগুলো অনুসরণ করলে শুধু শরীরের তারুণ্য বজায় রাখা নয়, বরং বার্ধক্যজনিত নানা রোগের ঝুঁকি কমানোও সম্ভব।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালিত এই গবেষণায় কয়েক হাজার মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যগত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডায়েট—‘প্রো-লংগেটিভিটি ডায়েট’ বা দীর্ঘায়ু-সহায়ক খাদ্যতালিকা—ব্যক্তির বার্ধক্যজনিত কোষ ক্ষয় কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো জটিল অসুস্থতাগুলোর ঝুঁকি হ্রাস করে।
কোন খাবারগুলো এই ডায়েটে রয়েছে?
এই দীর্ঘায়ু-সহায়ক ডায়েট মূলত উদ্ভিদভিত্তিক উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে:
- শাকসবজি ও ফলমূল: যেগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবারে ভরপুর।
- সম্পূর্ণ শস্য (Whole Grains): যেমন লাল চাল, গম, ওটস—যা রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বাদাম ও বীজ: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
- অলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর তেল: হার্টের সুস্থতায় সহায়ক।
- মাছ ও সামুদ্রিক খাবার: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা কোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- সীমিত পরিমাণে ডেইরি ও সাদা মাংস: পরিমিত পরিমাণে গ্রহণে উপকার মিললেও, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
- প্রসেসড খাবার ও রেড মিট থেকে দূরে থাকা: কারণ এসব খাবার কোষে প্রদাহ বাড়ায় এবং বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে।
শুধু খাবার নয়, সময়জ্ঞানও গুরুত্বপূর্ণ
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, খাবার শুধু কী খাওয়া হবে, তাই নয়—কখন খাওয়া হবে তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাওয়ার অভ্যাস, যেমন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা বিরতিশীল উপবাস, কোষের পুনর্জন্মে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যজনিত প্রদাহ হ্রাস করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী করা সম্ভব?
বাংলাদেশের প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেও রয়েছে অনেক ইতিবাচক দিক। যেমন—ডাল, শাকসবজি ও মাছ—এগুলো অনেকটাই এই দীর্ঘায়ু-সহায়ক ডায়েটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে সমস্যা তৈরি করছে অতিরিক্ত ভাজা খাবার, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যাপক ব্যবহার।
তাই স্বাস্থ্যবান এবং দীর্ঘায়ু জীবন যাপনের জন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। সম্ভব হলে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে:
- এক বাটি শাকসবজি ও ফলমূল
- লাল চাল বা ওটসের মতো সম্পূর্ণ শস্য
- বাদাম বা বীজের একটি মুঠো
- রান্নায় সানফ্লাওয়ার বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার
- সপ্তাহে অন্তত ২ দিন মাছ খাওয়া
- অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও মিষ্টিজাত খাবার কমিয়ে আনা
জীবন বদলে দিতে পারে খাদ্যাভ্যাস
গবেষকরা মনে করছেন, আমাদের প্রতিদিনের পাতে থাকা খাবারই হতে পারে বয়সকে মন্থর করার চাবিকাঠি। এই গবেষণা যেন বলে—”যেমন খাব, তেমন থাকবে!” সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন চাইলে আমাদেরই হাতে রয়েছে সেই ক্ষমতা।
বয়সের গতি হয়তো থামানো যাবে না, তবে তা ধীর করা সম্ভব। আর সেটি শুরু হতে পারে আজই, আপনার পাতে নতুন কিছু যুক্ত করে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ
