বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট একটি অপরিহার্য সেবা হিসেবে বিবেচিত। উন্নত বিশ্বে ইন্টারনেট ছাড়া দৈনন্দিন জীবন কল্পনাই করা যায় না। গন্তব্য খোঁজা থেকে শুরু করে কেনাকাটা, ফ্লাইট টিকিট বুকিং, বা কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন—সবক্ষেত্রেই ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এমন এক সময়েও ইউরোপের অন্যতম উন্নত দেশ জার্মানিতে এখনো প্রায় ২৮ লাখ মানুষ কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি—এমন পরিসংখ্যান বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
জার্মানির জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় সাড়ে আট কোটির জনসংখ্যার মধ্যে ৪ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ ২৮ লাখ নাগরিক জীবনে কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি। এই তথ্য উঠে এসেছে ইউরোপজুড়ে পরিচালিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক একটি গবেষণা থেকে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৬ থেকে ৭৪ বছর বয়সীরা এই গবেষণার আওতায় ছিলেন। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন না, তাদের ‘অফলাইনার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই শ্রেণিভুক্ত মানুষের সংখ্যা সামাজিক ও প্রযুক্তিগত বৈষম্যের একটি বড় চিত্র তুলে ধরে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী জনগণের মধ্যেই ইন্টারনেট ব্যবহার না করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ বয়স যত বাড়ছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা তত কমছে। এর বিপরীতে, কম বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গোটা ইউরোপে গড়ে ৫ শতাংশ মানুষ কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি। তবে দেশভেদে এই চিত্র ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনে এই হার মাত্র ১ শতাংশেরও কম, যা দেখায় যে দেশ দুটিতে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী।
ইন্টারনেট ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া, যেখানে প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষ কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রিস, যেখানে এই হার ১১ শতাংশ।
জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের মতে, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেটের আওতায় আসেনি। এই তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী এখনও ডিজিটাল বিভাজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
জার্মানির মতো একটি প্রযুক্তি-উন্নত দেশে এখনো ৪ শতাংশ নাগরিকের ইন্টারনেট ব্যবহার না করা একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত ব্যবধানের চিত্র তুলে ধরে, অন্যদিকে এটি সামাজিক ও শিক্ষা খাতের আরো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাকেও নির্দেশ করে। ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার অনেক বেশি হলেও কিছু দেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। ভবিষ্যতে এই বৈষম্য ঘোচাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ
