সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হার্ড লাইন নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালে সহিংসতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মসূচি ছিল ঢাকায় ফিলিস্তিনের পক্ষে সবচেয়ে বড় মিছিল। গোটা দেশেই এ উপলক্ষে গোয়েন্দা নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
গত ৭ এপ্রিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত কর্মসূচি চলাকালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো ছাড় না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে এবং অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছে।
আসন্ন পহেলা বৈশাখের কর্মসূচিগুলোতে কোনো ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে। রমনার বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাযাত্রা, হাতিরঝিল, রবীন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্ন স্থানে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে থাকবে।
ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা ও দেশের অন্যান্য বড় শহর ও বন্দর এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের টহল বাড়ানো হয়েছে। ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অপরাধীদের কঠোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে এবং বিদেশি ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছেন। এই সময়ে সহিংসতা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা সরকারকে চরম বিব্রত করেছে। এ জন্য সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
গত সোমবারের হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির ঘাটতির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, আশপাশে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও প্রতিরোধে সক্রিয় ছিল না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সরকারের এই ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আগে থেকেই সতর্ক থাকলে দেশের বদনাম হতো না।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দুটি মামলা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়াধীন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানিয়েছেন, হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে রয়েছে এবং তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে।
দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের ভেতরে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আসন্ন বড় বড় কর্মসূচিতে যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেজন্য গোয়েন্দা তৎপরতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ
